
ডেস্ক রিপোর্ট:
কুমিল্লায় ‘ছাত্রলীগ’ পরিচয়ে গ্রেপ্তার হওয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে তার বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ইমরান নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষার সময় সে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
গত সোমবার গভীর রাতে পুলিশ চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরানকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়। পরদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
পুলিশ জানায়, এসআই আলমগীর হোসেন পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন, যেখানে ২৫ জনের নামসহ ৫০–৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার ৬ নম্বর আসামি ইমরান। এজাহারে তাকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের মনতলী ব্রিজ এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের ৫০–৬০ জন নেতাকর্মী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী স্লোগান, ঝটিকা ও মশাল মিছিল করেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে ১ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমরানসহ অন্যদের নাম পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের।
তবে ইমরানের পরিবার পুরো অভিযোগকে অস্বীকার করেছে। ইমরানের বাবা ইসহাক মিয়া জানায়, তাদের পরিবার কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। হঠাৎ রাত ৩টার দিকে পুলিশ ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গেলেও কোনো সাহায্য পাননি। আদালতও জামিন দেননি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার জানায়, ইমরান নিয়মিত ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তিনি ইমরানের মুক্তি দাবি করেন।
স্কুলছাত্র ইমরান ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত, এমন কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে ছেলেটির এমন কোনো ছবি বা ভিডিও নেই। তবে ওই দিন রাতে তাকে গ্রেপ্তারের আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যে ইমরানের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে, ইমরান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়েছে। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে যথাযথ নিয়ম মেনে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।’
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে ওসি এ কে ফজলুল হক জানান, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিটা তদন্তে প্রমাণ হবে।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এলাকায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে চার্জশিটে নাম থাকবে না।